উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ডাইনোসর সময়গত রেঞ্জ: অন্তিম ট্রায়াসিক–হলোসিন, 231.4–0Ma |
|
---|---|
![]() |
|
কয়েকটি ডাইনোসর কংকালের জীবাশ্ম। ঘড়ির কাঁটার গতিমুখ বরাবর একদম উপরে বাঁ দিক থেকে- মাইকোর্যাপ্টর গুই(একটি ডানাওয়ালা থেরোপড), অ্যাপাটোসরাস লুইসি(একটি দৈত্যাকার সরোপড), স্টেগোসরাস স্টেনোপ্স্(একটি পাতযুক্ত স্টেগোসর), ট্রাইসেরাটপ্স্ হরিডাস(একটি শিঙযুক্ত সেরাটোপ্সিয়ান), এডমন্টোসরাস রেগালিস(একটি হংসচঞ্চু অর্নিথোপড), গ্যাস্টোনিয়া বার্গেই(একটি বর্মাবৃত অ্যাঙ্কিলোসর)। | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ/রাজ্য: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপ-পর্ব: | ভার্টিব্রাটা |
শ্রেণী: | সরোপসিডা |
উপ-শ্রেণী: | ডায়াপসিড |
Infraclass: | আর্কোসরোমর্ফা |
মহাবর্গ: | ডাইনোসরিয়া * ওয়েন, ১৮৪২ |
বর্গ এবং উপবর্গ | |
|
ডাইনোসর পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী। এই
প্রভাবশালী মেরুদণ্ডী প্রাণীরা প্রায় ১৬ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব
করেছে। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। ক্রিটেশিয়াস যুগের শেষে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর পূর্বে একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডাইনোসরদের প্রভাবকে পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে দেয়। তাদের একটি শ্রেণীই কেবল বর্তমান যুগ পর্যন্ত টিকে থাকতে পেরেছে বলে ধারণা করা হয়: শ্রেণীবিন্যাসবিদরা ধারণা করেন আধুনিক পাখিরা থেরোপড ডাইনোসরদের সরাসরি বংশধর[১]; জীবাশ্ম দ্বারা প্রাপ্ত নিদর্শন থেকে জুরাসিক যুগে সংঘটিত এই বিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায়[২]।
শ্রেণীবিন্যাসগত, অঙ্গসংস্থানগত ও পরিবেশগত দিক থেকে ডাইনোসর কথাটিকে বিভিন্ন প্রকারের কতকগুলি প্রাণীর একটি সাধারণ নাম হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। জীবাশ্ম প্রমাণ থেকে পুরাজীববিদরা উড়তে অক্ষম ডাইনোসরদের ৫০০ এরও বেশি গণ ও ১০০০ এরও বেশি প্রজাতিকে শনাক্ত করেছেন[৩]। সব কয়টি মহাদেশেই ডাইনোসরদের জীবন্ত ও প্রস্তরীভূত নানা প্রজাতির দেখা পাওয়া যায়[৪], যাদের মধ্যে শাকাহারী ও মাংসাশী- উভয় প্রকার উদাহরণই রয়েছে। যদিও উৎপত্তিগতভাবে ডাইনোসরেরা দ্বিপদ, কিন্তু অবলুপ্ত অনেক চতুষ্পদ প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে, এবং কোনো কোনো প্রজাতি গমনের
সময় প্রয়োজনমত দুই পা অথবা চার পা ব্যবহার করতে পারত। সমস্ত বিভাগের
ডাইনোসরদের মধ্যেই শিং, হাড় ও চামড়ার পাত প্রভৃতি প্রদর্শনমূলক
অঙ্গসংস্থানের নিদর্শন রয়েছে, এবং কোনো কোনো অবলুপ্ত প্রজাতির কংকালে
হাড়ের বর্ম
ও কাঁটার মত গঠন লক্ষ্য করা যায়। বিভাগ নির্বিশেষে ডাইনোসরদের অন্যতম
সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল ডিম পাড়া ও বাসা বানানোর অভ্যাস। ওড়ার খাতিরে কিছু
শারীরবৃত্তীয় বাধ্যবাধকতার জন্য আধুনিক পাখিরা আকারে ছোট হলেও
প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরদের অনেকেই ছিল বিশালদেহী। বৃহত্তম সরোপড ডাইনোসরেরা ৫৮ মিটার (১৯০ ফুট) পর্যন্ত দীর্ঘ এবং ৯.২৫ মিটার (৩০ ফুট ৪ ইঞ্চি) পর্যন্ত উঁচু হত[৫]।
তবুও উড়তে অক্ষম ডাইনোসর মাত্রই বিশালাকার হবে- এই ধারণাটা ভুল। আবিষ্কৃত
জীবাশ্মের বেশির ভাগই বড় মাপের ডাইনোসর- এ'কথা ঠিক। কিন্তু এর কারণ হল
জীবাশ্মের আকার বড় হলে তা প্রকৃতির প্রতিকূলতা সহ্য করে প্রস্তরীভবন
পর্যন্ত সহজে টিকে থাকতে পারে। আসলে অনেক ডাইনোসরই ছিল খুদে; যেমন, জিজিয়ানিকাস (Xixianykus) নামক ডাইনোসরটির দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৫০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২০ ইঞ্চি)।
যদিও 'ডাইনোসর' কথাটার আক্ষরিক অর্থ ভয়ানক গিরগিটি, কিন্তু ডাইনোসরেরা প্রকৃতপক্ষে গিরগিটি বা টিকটিকি নয়। বরং তারা সরীসৃপ শ্রেণীর অন্তর্গত একটা আলাদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, যাদের শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ অনেকাংশে বর্তমান সরীসৃপদের থেকে পৃথক; যেমন, তারা ছিল উষ্ণশোণিত
এবং দ্বিপদ গমনে সক্ষম। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে অর্থাৎ পাখিদের ডাইনোসর
বলে চিহ্নিত করার আগে পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা ডাইনোসরদের অলস এবং অনুষ্ণশোণিত বলে মনে করতেন। ১৯৭০ এর দশক এবং তৎপরবর্তী অধিকাংশ গবেষণা থেকে অবশ্য জানা গেছে যে সমস্ত ডাইনোসর ছিল উচ্চ বিপাক হার যুক্ত, অতিমাত্রায় সক্রিয় প্রাণী এবং তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগের জন্য বিভিন্নভাবে অভিযোজিত হয়েছিল।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ডাইনোসরের প্রথম জীবাশ্ম
আবষ্কৃত হয়। এরপর থেকে পর্বতগাত্র বা শিলায় আটকা পড়ে থাকা ডাইনোসরের
কঙ্কাল পৃথিবীর বিভিন্ন জাদুঘরে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
ডাইনোসরেরা বর্তমান বিশ্ব সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে।
প্রধানত কোনো কোনো অবলুপ্ত ডাইনোসর প্রজাতির বিশাল আয়তন এবং তাদের
সম্ভাব্য হিংস্র স্বভাবের দরুণ তারা শিশু ও বয়স্ক সবার কাছেই বিশেষ
আগ্রহের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সর্বাধিক বিক্রিত বই এবং জুরাসিক পার্ক ইত্যাদি প্রচুর কাটতি পাওয়া চলচ্চিত্রে ডাইনোসর প্রসঙ্গ এসেছে এবং এ সংক্রান্ত নতুন যে কোনো আবিষ্কার গণমাধ্যমে বিশেষভাবে সম্প্রচার করা হচ্ছে।
পরিচ্ছেদসমূহ
- ১ ব্যুৎপত্তি
- ২ ব্যবহৃত পরিভাষা
- ৩ ডাইনোসর কাকে বলে: সংজ্ঞা
- ৩.১ সাধারণ বর্ণনা
- ৩.২ গুরুত্বপূর্ণ শারীরস্থানিক বৈশিষ্ট্য
- ৪ ডাইনোসরের শ্রেণীবিন্যাস
- ৫ আরও দেখুন
- ৬ পাদটীকা এবং তথ্যসূত্র
- ৭ সাধারণ তথ্যসূত্র
- ৮ বহিঃসংযোগ
ব্যুৎপত্তি
১৮৪২ খ্রীষ্টাব্দে পুরাজীববিদ স্যার রিচার্ড ওয়েন, ডাইনোসরিয়া ট্যাক্সনটির আনুষ্ঠানিক নামকরণ করেন। তৎকালীন ইংল্যাণ্ড এবং অবশিষ্ট পৃথিবীর নানা অঞ্চল থেকে সরিয়ান
(Saurian) গোষ্ঠীর সরীসৃপদের যে "বিশিষ্ট শাখা অথবা উপবিভাগের" সদস্যদের
অবশেষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল, তাদের নির্দিষ্ট করতেই এই শব্দটির ব্যবহার
শুরু হয়[৬]। গ্রিক ভাষার δεινός (দেইনস, অর্থাৎ "ভয়ংকর", "পরাক্রান্ত" অথবা "আশঙ্কা উদ্রেককারী ও মহান") এবং σαῦρος (সাউরোস, অর্থাৎ "টিকটিকি" অথবা "সরীসৃপ")- এই দু'টি শব্দ জুড়ে ডাইনোসর কথাটি তৈরী হয়েছে[৭][৮]।
যদিও নামটা ডাইনোসরদের দাঁত, নখ ও অন্যান্য ভয়াবহ বৈশিষ্ট্যের কথা মনে
পড়িয়ে দেয়, কিন্তু ওয়েন এই নামকরণ করেছিলেন প্রধানত প্রাণীগুলোর
আয়তনের কথা মাথায় রেখে[৯]।
ব্যবহৃত পরিভাষা
বাংলা | ইংরেজি |
---|---|
পক্ষিকুল | Aves |
মেরুদণ্ডী | Vertebrata |
জাতিজনি শ্রেণীবিন্যাস | Phylogenetic taxonomy |
স্থল গমন | Terrestrial locomotion |
বাস্তুতন্ত্রগত ধাপ | Ecological niche |
ডাইনোসর কাকে বলে: সংজ্ঞা


জাতিজনি শ্রেণীবিন্যাসের অধীনে সাধারণত ট্রাইসেরাটপস, নিঅর্নিথিস (আধুনিক পাখি), এদের সাম্প্রতিকতম সাধারণ পূর্বপুরুষ(সা.সা.পূ./Most Recent Common Ancestor/MRCA) ও তাদের সমস্ত বংশধরকে ডাইনোসর বলা হয়[১০]। অন্য একটি মত অনুযায়ী মেগালোসরাস এবং ইগুয়ানোডন এর সা.সা.পূ. থেকে ডাইনোসরদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত, কারণ রিচার্ড ওয়েন যখন ডাইনোসরিয়া-র শনাক্তকরণ করেছিলেন তখন এই দু'টি ছিল তাঁর দ্বারা নির্দিষ্ট তিনটি গণের অন্যতম[১১]। দু'টি পদ্ধতিই একই জীবসমষ্টিকে ডাইনোসর হিসেবে চিহ্নিত করে: ডাইনোসরিয়া= অর্নিথিস্কিয়া+সরিস্কিয়া; যাদের অন্তর্গত হল থেরোপড (প্রধানত দ্বিপদ মাংসাশী এবং পাখি), অ্যাঙ্কিলোসর (বর্মযুক্ত শাকাহারী চতুষ্পদ), স্টেগোসর (পাতযুক্ত শাকাহারী চতুষ্পদ), সেরাটপ্সিয়া (শিং ও শিরস্ত্রাণযুক্ত শাকাহারী চতুষ্পদ), অর্নিথোপড (হাঁসের মত চঞ্চুবিশিষ্ট শাকাহারী দ্বিপদ বা চতুষ্পদ) এবং সরোপডোমর্ফ (প্রধানত লম্বা গলা ও লেজযুক্ত বৃহৎ শাকাহারী চতুষ্পদ) রা[১২]।


বর্তমানে পাখিদেরকে থেরোপড ডাইনোসরদের একমাত্র জীবিত বংশধররূপে গণ্য করা হয়। গতানুগতিক শ্রেণীবিন্যাসবিদ্যায় পাখিদের ডাইনোসর থেকে বিবর্তিত একটা আলাদা শ্রেণী বলে মনে করা হত। অবশ্য ডাইনোসর নিয়ে আগ্রহী সাম্প্রতিক জীববৈজ্ঞানিকদের অধিকাংশই গতানুগতিক পদ্ধতির পরিবর্তে জাতিজনি নামকরণের
পক্ষ সমর্থন করেন। এই পদ্ধতি অনুযায়ী কোনো প্রাণী বা উদ্ভিদ বিভাগের
সমস্ত উত্তরপুরুষ ঐ বিভাগের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়। পাখিরা তাই ডাইনোসর,আর
সেই সূত্রেই ডাইনোসরেরা বিলুপ্ত নয়, জীবিত। পাখিদের ম্যানিরাপোটা অধঃবিভাগের অন্তর্গত মনে করা হয়; ম্যানিরাপোটা বর্গটি সেলুরোসরাসদের অন্তর্গত; সেলুরোসরাসরা এক প্রকার থেরোপড, থেরোপডরা এক প্রকার সরিস্কিয়ান এবং সরিস্কিয়ানরা এক প্রকার ডাইনোসর[১৩]।
কিন্তু সাধারণের বক্তব্য ধর্তব্যের মধ্যে আনলে ডাইনোসরের মধ্যে পাখিদেরকে
বাদ দিতে হয়। স্পষ্টতার খাতিরে এই নিবন্ধে, "ডাইনোসর" শব্দটি বলতে "উড়তে
অক্ষম ডাইনোসর"-দের বোঝানো হবে এবং "পাখি" শব্দটি "উড়তে সক্ষম ডাইনোসর"-এর
প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। উড়তে সক্ষম ডাইনোসর বলতে আর্কিওপ্টেরিক্স
পূর্বপুরুষ থেকে বিবর্তিত এবং আধুনিক পাখিদের সবাইকেই বোঝানো হবে। গুরুত্ব
দিয়ে কোন বিষয় উল্লেখ করতে হলে "উড়তে অক্ষম ডাইনোসর" শব্দটিই ব্যবহৃত
হবে।
সাধারণ বর্ণনা
উপরে প্রদত্ত একটি সংজ্ঞা ব্যবহার করে বলা যায়, দেহের সম্পূর্ণ ভার বহনক্ষম উপাঙ্গ যুক্ত আর্কোসরেরা হল ডাইনোসর[১৪]। ডাইনোসর নামটি জনপ্রিয় ধারণায় অন্যান্য কিছু প্রাগৈতিহাসিক সরীসৃপকে বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে রয়েছে ডিমেট্রোডন নামক পেলিকোসর, পাখাবিশিষ্ট টেরোসর, জলচর প্লেসিওসর এবং মোসাসর। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনটিই ডাইনোসর ছিল না এবং এদের কারোরই প্রকৃত ডাইনোসরদের মত সম্পূর্ণ দেহভার বহনকারী উপাঙ্গ ছিল না[১৫]। ডাইনোসরেরা ছিল মেসোজোয়িক মহাযুগের, বিশেষত জুরাসিক ও ক্রিটেশিয়াস কালপর্বের প্রধান স্থলচর মেরুদণ্ডী। অন্যান্য ধরণের প্রাণীদের প্রভাব আয়তন ও বাস্তুতন্ত্রগত ধাপের নিরিখে ছিল খুব সীমিত। যেমন, সমসাময়িক স্তন্যপায়ীরা প্রায় কখনোই আয়তনে আধুনিক বিড়ালের থেকে বড় হত না; তাদের বেশির ভাগই ছিল ইঁদুর জাতীয় ক্ষুদ্র পতঙ্গভুক জীব[১৬]।


ডাইনোসরেরা বরাবরই বিচিত্র এবং বহু-বিভাজিত একটি প্রাণীগোষ্ঠী হিসেবে
বিবেচিত হয়েছে। ২০০৬ খ্রীষ্টাব্দের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী উড়তে অক্ষম
ডাইনোসরদের ৫০০ এরও বেশি গণ এখনও অবধি নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা গেছে, এবং
আন্দাজ করা হয় যে সারা পৃথিবীতে সঞ্চিত মোট ডাইনোসর জীবাশ্মের মধ্যে
প্রায় ১৮৫০ টির কাছাকাছি সংখ্যক আলাদা আলাদা গণ রয়েছে, যার প্রায় ৭৫ শতাংশ আজও আবিষ্কার করা যায়নি[১৭]। এতদপেক্ষা কিঞ্চিৎ পুরোনো একটি গবেষণায় ডাইনোসরদের গণের সংখ্যা ৩৪০০ নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে অনেকগুলিই সম্ভবত জীবাশ্মে পরিণত হতে পারে নি[১৮]। ২০০৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৭ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০৪৭ টি ভিন্ন ভিন্ন ডাইনোসর প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়েছে[১৯]।
এদের মধ্যে কেউ কেউ শাকাহারী এবং কেউ কেউ মাংসাশী। ডাইনোসরদের বিভিন্ন
প্রকার খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে গাছের বীজ,মাছ, পতঙ্গ ইত্যাদি নানা উপাদানের
সমাবেশ ছিল; এমনকি সর্বভুক ডাইনোসরের নিদর্শনও পাওয়া গেছে। যদিও
ডাইনোসরেরা (এবং সেইসূত্রে পাখিরা) উৎপত্তিগতভাবে দ্বিপদ, কোনো কোনো
প্রাগৈতিহাসিক প্রজাতি চতুষ্পদও ছিল। এছাড়া অ্যামোসরাস এবং ইগুয়ানোডনের
মত কিছু প্রজাতি ইচ্ছামত গমনের সময় চার পা বা দুই পা ব্যবহার করতে পারত।
জীবাশ্ম প্রমাণ থেকে জানা যায়, আদি জুরাসিক যুগেই ডাইনোসরেরা সারা
পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিল[২০]। আধুনিক পাখিদের আবাসস্থল বহুবৈচিত্র্যপূর্ণ; তারা স্থল ও সামুদ্রিক- উভয় পরিবেশেই স্বচ্ছন্দ থাকতে পারে। এছাড়া মাইকোর্যাপ্টর এর মত কিছু কিছু উড়তে অক্ষম ডাইনোসরের বাতাসে ভর করে সাময়িকভাবে ভাসমান থাকার ক্ষমতা এবং স্পিনোসরিড দের আংশিক জলচর স্বভাবের পক্ষেও প্রমাণ আছে[২১]।
গুরুত্বপূর্ণ শারীরস্থানিক বৈশিষ্ট্য
যদিও সাম্প্রতিক গবেষণাসমূহের পর ডাইনোসরদের শারীরস্থানিক বৈশিষ্ট্যের
কোনো সর্বজনসম্মত তালিকা প্রকাশ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে, তবুও আজ পর্যন্ত
আবিষ্কৃত অধিকাংশ ডাইনোসর হয় আদিম আর্কোসরীয়
কংকালের কিছু গঠনগত বৈশিষ্ট্য দেখায়, নয়তো ঐ সমস্ত বৈশিষ্ট্যযুক্ত কোনো
পূর্বপুরুষ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে বলে বোঝা যায়। বিবর্তনের ধারায়
অপেক্ষাকৃত পরের দিকে আসা কিছু প্রজাতির দেহে এই বৈশিষ্ট্যগুলি বেশি
মাত্রায় পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ডাইনোসরিয়ার সাধারণ
চরিত্রগত বলে মনে করা হয়; প্রাচীনতম ডাইনোসরেরা এ'গুলি তাদের বংশধরদের
দেহে সঞ্চারিত করে গেছে। এই ধরণের বৈশিষ্ট্য-সমষ্টিগুলি কোনো নির্দিষ্ট
শ্রেণীবিন্যাসগত বিভাগের সাম্প্রতিকতম সাধারণ পূর্বপুরুষের দেহে উৎপন্ন হয় এবং এগুলিকে ঐ নির্দিষ্ট বিভাগের সাইন্যাপোমর্ফি (synapomorphies) বলে[২২]।
আর্কোসরদের আন্তঃসম্পর্ক সম্বন্ধে এস নেসবিট[২৩]-এর পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা নিম্নলিখিত বারোটি সাইন্যাপোমর্ফি নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করেছে। কোনো কোনোটা আগে থেকেই জানা ছিল:






- মাথার খুলির ছাদের পিছন দিকের দু'টি প্রধান গহ্বরের (সুপ্রাটেম্পোরাল ফেনেস্ত্রা/Supra-temporal Fenestra) সামনে একটি করে অবতল খাঁজ বা ফসা থাকে।
- ঘাড়ের প্রথম দু'টি কশেরুকা অ্যাটলাস এবং অ্যাক্সিস-এর সামনের দিকে এপিপোফাইসিস নামক উপবৃদ্ধি দেখা যায়।
- ডেল্টো-পেক্টোরাল পেশিসমূহের সংযোগস্থল অগ্রপদের প্রথম হাড় প্রগণ্ডাস্থির ৩০% বা তার বেশি দৈর্ঘ্যে অবস্থিত।
- অগ্রপদের রেডিয়াস হাড়ের দৈর্ঘ্য প্রগণ্ডাস্থির ৮০% এর কম।
- উরুর হাড়ের পিছন দিকে কডোফিমোরালিস পেশির সংযোগস্থলে অবস্থিত উপবৃদ্ধিটি (চতুর্থ ট্রোক্যান্টার) অতি স্পষ্ট এবং কানা-উঁচু চামচের আকৃতিবিশিষ্ট (ছবি দেখুন)।
- চতুর্থ ট্রোক্যান্টার আকারে অসমান; এর এক দিকের কানা অন্য দিক অপেক্ষা বেশি উঁচু থাকে।
- গোড়ালির অস্থিসমূহের সাথে পায়ের ফিবুলা হাড়ের প্রথম সংযোগস্থলটি ঐ হাড়গুলির ৩০% এর কম স্থান অধিকার করে থাকে।
- খুলির পিছন দিকে অবস্থিত বহিঃঅক্সিপিটাল হাড় দু'টি মস্তিষ্ক-গহ্বরের মেঝের মাঝ বরাবর পরস্পরের সাথে মিলিত হয় না।
ডাইনোসরের শ্রেণীবিন্যাস
নিচে ডাইনোসরের শ্রেণীবিন্যাস দেওয়া হল-
- Saurischia: এসব ডাইনোসরের পম্চাত ছিল সরীসৃপদের মতো।
- Theropods: এটি মাংসভোজি ডাইনোসরের দল।
- Sauropods: এরা লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকত। এদের ছিল খুব লম্বা লম্বা গলা।
- Ornithischia: এরা লতাপাতা ভোজি যাদের পাখির মতো ঠোঁট ছিল।
- Armoured dinosaurs: এদের পিঠে ছিল বড় বড় হাড় যা এদেরকে রক্ষা করত।
- Cerapoda :
- Ornithopoda: এরা “duck-billed” ডাইনোসর।
- Pachycephalosauria: এসব ডাইনোসরের মাথা ছিল খুব শক্ত।
- Ceratopsia: এরা শিংওয়ালা জাতির অন্তর্ভূক্ত।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন